অরিজিৎ সিং খুব গোলমেলে একজন লোক...
অরিজিৎ সিং খুব গোলমেলে একজন লোক। কিছুদিন আগে দেখলাম Ed Sheeran কে scooty তে চাপিয়ে জিয়াগঞ্জের গলিতে ঘুরছেন। কোনোদিন ভাবিনি জিয়াগঞ্জ আর Ed Sheeran একসাথে উচ্চারিত হতে পারে।
গতকাল দেখলাম Martin Garrix ওনার জিয়াগঞ্জের বাড়ির ছোট্ট সোফায় বসে একসাথে গান তৈরি করছেন, beer খাচ্ছেন।
দুইজনের ক্ষেত্রেই দেখে মনে হলোনা কোন আলাদা আয়োজন করা হয়েছে। এলোমেলো ঘর, যেমনটা মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে থাকে। আমার আপনার মামাতো ভগ্নিপতির খুড়তুতো দাদা গোছের কেউ বাড়ি এলে সাধারণত যে ritual গুলো মধ্যবিত্ত বাঙালি করে থাকে (বাবার বিয়েতে পাওয়া bedcover বার করা, ঘোরের সব খুচরো জিনিষ পর্দার পেছনে লুকিয়ে ফেলা অথবা প্রচন্ডভাবে যত্নে তুলে রাখা দামী চায়ের কাপ উদ্বোধন করা) সেগুলোও মনে হয়না অরিজিৎ করেছেন। রোজ যেমন থাকেন, ঠিক সেরকমই সবকিছু।
আমাদের ছোটবেলা থেকেই "My life, my rules" বলে একটা caption মুখে মুখে ঘুরত। এখন সেটা এসে "Mah life, mah rules" এ বিবর্তিত হয়েছে। এই anti establishment caption অনেকক্ষেত্রেই teenage ছেলেদের tshirt এ দেখতে পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত তাদের কাছে সবচেয়ে বড় এবং বিরক্তিকর প্রতিষ্ঠান তার বাবা, মায়ের তৈরি করা নিয়ম যা তার ওই বয়সের নানান adventure এ বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেখান থেকেই এই protest এর উৎপত্তি। আমি কোনো মধ্যবয়স্কা গৃহকর্ত্রীকে ওই টিশার্ট পরতে দেখিনি।
সত্যই যদি কেউ এই tshirt পরার যোগ্য হন, তার মধ্যে অন্যতম বোধহয় অরিজিৎ সিং। লোকটা সমাজের সমস্ত শ্রেনীকে একসাথে নাড়িয়ে দিচ্ছেন। শিল্পীরা ভাবছেন এত খরচ করে হোম স্টুডিও বানালাম, acoustics করলাম, না করলেও বোধহয় চলে যেত। PR agency গুলো বুঝতে পারছেন না ওটা বিনয়, না PR. বিস্তর debate বসছে কলকাতার বৈঠকখানাগুলোতে। মায়েরা ভাবছেন ওনার বাড়িতেও ঠিক ওই লাল কমলা check check bedsheet টাই ছিল, একটু বেশি "loud" ভেবে শুধুশুধু দামী একটা bedcover কিনলেন ছেলের জন্মদিন হবে বলে।
যাঁরা জিয়াগঞ্জে থাকেন এবং ভাবছিলেন ওখানকার বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় শিফট করা দরকার, তাঁরাও নিশ্চই মহা সমস্যায় পড়েছেন। বুঝতে পারছেন না এর প্রভাব বাড়ির valuation এর ওপর কতটা পড়বে। নিশ্চই চায়ের দোকানের কোন জেঠু উপদেশ দিচ্ছেন আর কিছুদিন বিষয়টা hold করতে। কোনভাবে Trump বা Putin এলে খেলা ঘুরে যাবে। রিকশা থেকে টোটো, সবাই ভাড়া চাওয়ার আগে দুবার মেপে নিচ্ছেন। আমি ভাবছি জিয়াগঞ্জের সাধারণ মানুষের অসহায়তার কথা। রাস্তায় বিদেশি দেখলেই নিশ্চই কাজ ফেলে google করতে হচ্ছে।
কী বিড়ম্বনা বলুন তো!
এইসমস্ত থেকে একমাত্র যিনি বিরত তিনি বোধহয় অরিজিৎ সিং নিজে। সেটা না হলে এরকম একটা জীবনযাপন করা যায়না। আমি এমন অনেক মানুষ দেখেছি যাঁরা গরীব থাকতে মনে প্রাণে কমিউনিস্ট ছিলেন। চাকরি পাওয়ার পর হঠাৎ করে Open market এর পক্ষে shift করেছেন। বড়লোক এবং প্রকৃত অর্থে সমাজতন্ত্র practice করেন, এই উদাহরণ আমি অন্তত দেখিনি। এই কারণেই অরিজিৎ সিং তাঁর গানের বাইরেও অনন্য।
এইরকম মানুষ দেখলে অরুণ দার "ভিক্ষেতে যাবো" গানটার কথা মনে পড়ে যায়। যাঁরা গানটা জানেন না, তাঁদের জন্য দুটো verse নিচে লিখে দিলাম:
"নই কারও হুকুমের, নয় তো কেউ হুকুমের দাস আপন মেজাজে সদা আপনি করি বাস। তাই ভিক্ষেতেই যাবো গো আমি, ভিক্ষেতেই যাবো।
উন্নতির নেশা কিছু নেই, নেই পতনের ভয় নেই কোনও দুরাশার ঠেলা, নেই কোনও সংশয়। তাই ভিক্ষেতেই যাবো গো আমি, ভিক্ষেতেই যাবো।"
Written by Abhishek Chakraborty on Facebook.