অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা এবং অবিলম্বে নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমার কিছু আশা ছিল—

  1. পুলিশি নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ
  2. উন্মত্ত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ
  3. নির্বিচারে মানুষ হত্যাকারী রাঘব বোয়ালদের বিচার নিশ্চিত করা
  4. ধর্মীয় উগ্রবাদকে প্রশ্রয় না দেওয়া
  5. সিন্ডিকেট ভাঙা

বাস্তবে যা হয়েছে—

১)পুলিশি নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত-

  • সিলেক্টিভ পুলিশ ব্রুটালিটি চালু আছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে, শুধু টার্গেট পরিবর্তন হয়েছে।
  • শ্রমিক ও নিম্ন বেতনের চাকরিজীবীদের ওপর পুলিশি দমন পীড়ন ও হত্যা বজায় আছে।
  • প্রকৃত অপরাধ দমনে সরকার ব্যর্থ।
  • উন্মত্ত জনতার সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতা- সরকারের ব্যর্থতা শুধু প্রশাসনিক নয়, দায়িত্বশীলদের বক্তব্যে "মব জাস্টিস" সমর্থনের আভাস পাওয়া যায়।
  • অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও প্রতিশোধমূলক আক্রমণ বাড়লেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয়।

২)অপরাধীদের বিচার না করে দেশত্যাগে সহায়তা

  • সরকার ও সেনাবাহিনী🥵🥵 বেশিরভাগ জুলাই মাসাকারে জড়িত অপরাধীদের দেশ থেকে পালাতে সাহায্য করেছে।

  • আইওয়াশ হিসেবে কেবল কয়েকজনকে ধরা হয়েছে।

  • এই সরকার যে জুলাই মাসাকারের জড়িতদের বিচার করার ক্ষমতা বা সদিচ্ছা রাখে না, তা স্পষ্ট।

৩)ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতা-

  • মাজার ভাঙা, ফ্যালস ফ্ল্যাগ এটাকের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়া।
  • মেয়েদের ফুটবল খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ভেস্তে দেওয়া।
  • ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ দমনে সম্পূর্ণ ব্যর্থতা।
  • সংবিধান সংশোধনের নামে ধর্মনিরপেক্ষতা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টা।

৪)সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো পদক্ষেপ নাই-

  • নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সিন্ডিকেট আগের মতোই বহাল।
  • কর বৃদ্ধি করে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ানো হয়েছে।
  • রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে অর্থনীতির ক্ষতি- রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
  • প্রাক্তন সরকারের দোসরদের নিয়ন্ত্রিত কিছু ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ায় দেশীয় উৎপাদন ও রপ্তানি খাতে মন্দা দেখা দিচ্ছে।

অবিলম্বে নির্বাচন আয়োজন ও রাজনৈতিক শাসন পুনর্বহালের প্রয়োজনীয়তা-

  • অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্বল এবং অভ্যন্তরীণ কনফ্লিক্টে ভরপুর।
  • এদের কাছ থেকে গণমুখী বা প্রগতিশীল কোনো পদক্ষেপ আশা করা উচিত নয়।
  • মব নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
  • রাষ্ট্রের টিকে থাকার প্রক্রিয়া হচ্ছে "বৈধ সহিংশতার উপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ"— যা এই সরকারের স্পষ্টই নাই ।যেহেতু আমরা কোনো নৈরাজ্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাইনি এবং অদূর ভবিষ্যতে এমন বিপ্লবের সম্ভাবনাও ক্ষীণ, তাই গৃহযুদ্ধ এড়িয়ে ও রাষ্ট্রের কাঠামো টিকিয়ে রাখতে অবিলম্বে নির্বাচন প্রয়োজন।